আজ ভোর রাতে দাদী পরলোকগমন করেছে। তাই সকাল থেকে প্রচুর লোকজন জড়ো হয়েছে। কেউ মারা গেলে যেমন কান্নার রোল পরে, এক্ষেত্রে তেমন কিছু খেয়াল করলাম না। ফুফুরা এসে কিছুক্ষন কান্নাকাটি করলো, কিন্তু জানাজার পর সবকিছু স্বাভাবিকের মত লাগলো। সবাই পরিবারের গল্প, সংসারের গল্প বলেই সময় কাটাতে লাগলো। আসলে মানুষের বয়স হয়ে গেলে, তার গুরুত্ব যে কমে যায়, সেটা খুব ভালো ভাবেই লক্ষ্য করলাম। ব্যপারটা এমন হয়ে যায় যে, মারা গেলেই যেন নিস্তার।
রাতের বেলায় আমার ফুফু, চাচা এবং আন্ধুরা মিলে মিটিং এ বসলেন। যেহেতু আমরাও পরিবারের সদস্য, তাই আমরাও মিটিং এর অংশ ছিলাম। মিটিংটা ছিল মূলত দাদার সম্পত্তি ভাগ নিয়ে। যদিও দাদা তখনও জীবিত ছিল। দাদী মারা যাবার পর থেকে দাদা রুম থেকে এখনও বের হয়নি। কিছু মুখেও দেয়নি। সবাই অনেক চেষ্টা করেও কিছু খাওয়াতে পারেনি। সবার ভয় দাদার যেহেতু বয়স হয়েছে, তাই দাদু বেচে থাকতেই জমির ভাগ হোক। মধ্যরাত পর্যন্ত এসব মিটিং চলে। মিটিং এটাও সিদ্ধান্ত নেয়, যেহেতু সম্পত্তি ভাগ হয়েছে, তাই সবার বাড়িতে দাদু ১৫ দিন করে থাকবে।
ব্যপারটা আমি মেনে নিতে পারছিলামনা। একটা নিঃস্বঙ্গ মানুষকে কেন এভাবে নিজের বাড়ি ছেড়ে সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে থাকতে হবে। কিন্তু কিছু করারও ছিলনা আমার। আমার কথাকেই কেবা গুরুত্ব দিবে।
আজ ৩ দিন হয়ে গেলে দাদু এখনও স্বাভাবিক হতে পারেনি। দাদীর শোকে ম্রিয়মান হয়ে বসে আছেন। আমি যেহেতু সবার ছোট নাতি ছিলাম, তাই আমার সাথে দাদার জমতে বেশ। দাদুর সাথে প্রায়ই খোশগল্প হতো। তাই ভাবলাম, দাদুর মন ভালো করতে তাকেই সময় দিই।
-আচ্ছা দাদু, শুনেছি দাদীকে নাকি তুমি প্রেম করে বিয়ে করছিলা?
-তোক আবার কে বললো?
-তুমি না থাকলে দাদী তো আমাকে সবই বলতো। আমি তো দাদীর দ্বিতীয় বর ছিলাম, আমাক না বললে কাকে বলবে?
-আরে তখন কি আর জানতাম, এটাকে প্রেম বলে? তোর দাদীকে দেখলাম, ভালো লাগে গেলো। তারপর তো রোজ তোর দাদীর বাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করতাম। তোর দাদী তো পাত্তাই দিতো না।
-তাহলে দাদী তোমার জালে ফাসলো কেমনে। এত সুন্দর দাদী, তোমার পাল্লায় পড়লো কেমনে?
-সে অনেক কথা। তোর দাদীকে মানিয়ে নিছিলাম। এরপর তো বিয়েটাও করে ফেললাম ধুমধাম করে।
-আচ্ছা দাদু, সবাই বলে তোমাদের মাঝে নাকি প্রায়ই ঝগড়া হতো। কিন্তু আমি তো কখনো তোমাকে দাদীর সাথে ঝগড়া করতে দেখিনি?
-শোন দাদু ভাই, কেউ যখন তোক খুব ভালোবাসবে, তখন তার সাথে সমস্যাও থাকবে। তোক নিয়ে সবসময় টেনশন করবে। তোক সন্দেহ করবে। তুই খাইতেছিসনা, এটাও সমস্যা তাদের কাছে। কারন, খুব যে ভালোবাসে তোকে কিন্তু। অনেক ছোটখাট বিষয়ে আবার ঝগড়াও হতে থাকে। আমি তো অনেকবার তোর দাদীর গায়ে হাতও তুলতাম। কিন্তু যখন আমাদের জীবন থেকে যৌবনের জৌলুস চলে যায়, তখন আমরা আসলে জীবনের মানেটা বুঝতে পারি। যে মানুষটা আমাকে যৌবনে ভালবেসে ছিল, সে আমাকে শেষ দিন পর্যন্ত ভালবাসতো। এটাই আমার কাছে সত্যিকারের ভালোবাসা। আমাদের এত রাগ, অভিমান হতো, তবু কিন্তু কেউ আমরা কাওকে ছেড়ে আলাদা হওয়ার কথা ভাবিনি। এটাই ভালবাসা। যেটার শুরু আছে, শেষ নেই।
দাদুর কথা শুনতে শুনতে কখন যে চোখ বেড়ে পানি গড়িয়ে পড়েছে খেয়ালই করিনি। দাদুও ছোট বাচ্চার মত ডুকরে কাদতে লাগলো। হয়তো দাদীর কথা খুব মনে পড়েছে। দাদুকে ঘুমিয়ে আমি আমরা রুমে চলে গেলাম।
সকালে সবার কান্নার আওয়াজে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। দাদু ঘুমের মাঝে পরলোকগমন করেছেন। এর মধ্য দিয়ে যেন একটা সত্যিকারের ভালবাসার পরিসমাপ্তি ঘটলো।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
বিষয় ছিল, ভালবাসার গল্প। আমি চেষ্টা করেছি যৌবনের এবং বৃদ্ধ বয়সের মাঝে ভালবাসাকে গল্প আকারে তুলে ধরতে।
০১ জুলাই - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪